ধর্ষণের কারণে বাল্যবিবাহ বিশেষ ধারায় পড়বে না

Encrypting your link and protect the link from viruses, malware, thief, etc! Made your link safe to visit.

ধর্ষণ বা ধর্ষণের পর গর্ভধারণের কারণে ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো মেয়ের সঙ্গে ধর্ষকের বিয়ে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের বিশেষ বিধানের আওতাধীন হবে না।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তৈরি করা বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের খসড়া বিধিমালায় এ কথা বলা হয়েছে। খসড়া অনুযায়ী, আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারির পরও গোপনে বাল্যবিবাহ দেওয়া হলে আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা যাবে।
আপত্তির মুখে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ কম বয়সে ছেলেমেয়েদের বিয়ের বিধান রেখে বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল সংসদে পাস হয়। অবশ্য আইনে বিশেষ প্রেক্ষাপট বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা স্পষ্ট করা হয়নি। এখানে বলা হয়েছে, বিধিমালায় নির্ধারিত কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে, আদালতের নির্দেশ এবং বাবা-মা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতিতে বিয়ে অনুষ্ঠিত হলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না। আইনে অপ্রাপ্তবয়স্ক বলতে কোনো নির্দিষ্ট বয়স উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ, ১৮ বছরের কম বয়সী যেকোনো ছেলেমেয়ে এর আওতায় পড়বে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, আইনের বিশেষ বিধানের প্রয়োগ ১৬ বছর পূর্ণ করেছে এ ধরনের শিশুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। এই বয়সী এক বা দুজন শিশুর পারস্পরিক সম্মতিতে বিয়েবহির্ভূত যৌন সম্পর্কের কারণে কোনো শিশু অন্তঃসত্ত্বা হয়ে গেলে বা সন্তানের জন্ম দিলে দুই পক্ষ তাদের মা-বাবার সম্মতিতে বিয়ে করার ঘোষণা আদালতে দাখিল করবে। আদালতের কাছে এটি একমাত্র ও সর্বোত্তম সমাধান বলে মনে হলে বিয়ের অনুমতি দেবেন।
যদি কোনো এক পক্ষ বিয়ে করতে না চায় এবং বিয়েবহির্ভূত এই সম্পর্কের কারণে মেয়েটি গর্ভধারণ করে, সে ক্ষেত্রে আদালত মেয়েটির ঋতুচক্র নিয়মিত (এমআর) করার জন্য অনুমতি দেবেন। বিয়ে ছাড়া যদি শিশুর জন্ম হয়, তাহলে শিশুটি বৈধ বিবেচিত হবে। শিশু জন্মদানকারী ছেলেমেয়ের কাছ থেকে ভরণ-পোষণ পাবে, সম্পদের উত্তরাধিকারী হবে। তা ছাড়া আদালত শিশু আইন অনুযায়ী বাল্যবিবাহের শিকার ছেলেমেয়ে এবং ধর্ষণের কারণে জন্মগ্রহণকারী শিশুর নিরাপত্তা, হেফাজত, কল্যাণ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেবেন।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক ১৫ মে তাঁর কার্যালয়ে বলেন, সবার মতামতের ভিত্তিতে খসড়া চূড়ান্ত করে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আইনের বিধির যে খসড়া করা হয়েছে, তা দেখে হতাশ হতে হয়েছে। খসড়া দেওয়ার ব্যাপারে কমিশনের আইনি অধিকার আছে।
মানবাধিকার কমিশনের খসড়া বিধির আগে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরেকটি বিধিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সরকারের ওই খসড়া অনুযায়ী, প্রেমের সম্পর্কের কারণে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে নিজেরা বিয়ে করলে এবং মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হলে বা সন্তানের মা হয়ে গেলে আদালত বিয়ের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারবেন।
সরকারের পক্ষ থেকে বাল্যবিবাহ নিরোধ বিধিমালা ২০১৭ (খসড়া) চূড়ান্ত করার জন্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (শিশু) মাসুক মিয়াকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সদস্য আইন ও সালিশ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক নীনা গোস্বামী বলেন, তাঁরা বিভিন্ন পক্ষের মতামত চেয়েছেন। তবে এই আহ্বানে তেমন একটা সাড়া মেলেনি। এর মধ্যেই মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে নতুন একটি খসড়া করা হলো।
সরকারের খসড়া চূড়ান্তকরণ-সংক্রান্ত কমিটির সদস্যসচিব আবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সরকার যে খসড়া তৈরি করেছে, তাতে কারও কোনো আপত্তি থাকলে মতামত দিতে বলা হয়েছে। সেই বিবেচনায় মানবাধিকার কমিশনের আলাদা খসড়া করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। ১০ জনে ১০টি খসড়া করলে তো হবে না, মন্ত্রণালয় যে খসড়া আমলে নিয়েছে তাতেই মতামত দিতে হবে।

Comment

Post a Comment